বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যার মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশই তরুণসমাজ। বলা হয়ে থাকে যে, একটি দেশের উপযুক্ত তরুণ সমাজ নিশ্চিত করে সেইদেশের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধিকে। তাই দেশের তরুণসমাজকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা একদিকে যেমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তেমনি তাদের গড়ে ওঠার পিছনে উপযুক্ত শিক্ষা এবং মূল্যবোধ প্রদান করাও জরুরি। এই বিষয়গুলিকে মাথায় রেখে প্রতিবছরের ন্যয় এবারও প্রেনিউর ল্যাব এবং এফএনএফ বাংলাদেশ আয়োজন করেছিল ফ্রিডম ফেলোস রেসিডেন্সিয়াল বুটক্যাম্পের। যেখানে অংশগ্রহণকারীদের জন্য ট্রেইনিং এর পাশাপাশি খাওয়া এবং থাকার জন্য সুব্যবস্থা ছিল।
ফ্রিডম ফেলোস রেসিডেন্সিয়াল বুটক্যাম্পটির আয়োজনের ঘোষণা আসার পরই ৩০০ এরও অধিক তরুণ এই প্রোগ্রামটিতে অংশগ্রহণ করার জন্য রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ করে। এই ৩০০ রেজিস্ট্রেশনের মধ্য থেকে ৩০ জন তরুণকে বিভিন্ন বিভাগ অনুযায়ী বাছাই করা হয় অংশগ্রহণের জন্য উপযুক্ত হিসাবে। এটি ছিল মূলত একটি চারদিন ব্যাপী কর্মশালা যার প্রথম দিন ছিল ১৮ মার্চ ২০২৩ এবং ২১ মার্চ ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত এই কর্মশালাটি চলমান ছিল। প্রোগ্রামটি অনুষ্ঠিত হয় কক্সবাজারের স্বনামধন্য হোটেল, হোটেল কল্লোলে। ১৮ তারিখ সকালেই এই ৩০ তরুণ তাদেরকে দেওয়া পূর্ববর্তী নির্দেশনানুযায়ী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কক্সাবাজারের এই হোটেল কল্লোলে এসে উপস্থিত হয়।
চারদিনব্যাপী এই বুটক্যাম্পের মাধ্যমে আয়োজিত কর্মশালায় অংশপগ্রহণকারীদেরকে বিবিধ বিষয়বস্তুর উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ১৮ মার্চ, ২০২৩ ছিল কর্মশালাটির প্রথম কার্যদিবস। এইদিনের কার্যক্রমে ছিল পরিচিতি পর্ব, সেশন সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা, বিষয়বস্তু বাছাই ইত্যাদি।
প্রথমদিন অর্থাৎ ১৮ মার্চ মূল কর্মশালাটি শুরু হয় আয়োজক প্রতিষ্ঠান দুইটির পরিচিতির মধ্য দিয়ে। এই সময় প্রেনিউর ল্যাবকে উপস্থাপন করেন এই প্রতিষ্ঠানটির হেড অফ অপারেশনস এবং এ্যাডমিন জনাব আশরাফুল তানভীর এবং এফএনএফ বাংলাদেশকে উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার জনাব ওমর মোস্তাফিজ। এরপর মূলপর্বের শুরুতে প্রেনিউর ল্যাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি জনাব আরিফ নিজামী একটি ভার্চুয়াল সেশন পরিচালনা করেন যার বিষয়বস্তু ছিল সমগ্র প্রোগ্রামটির সারসংক্ষেপ। এছাড়াও এই প্রোগ্রামটি থেকে আয়োজক এবং অংশগ্রহণকারী উভয়দেরই প্রত্যাশা সম্পর্কে তিনি আলোকপাত করেন। এরপর পরবর্তী দিনগুলোর জন্য পরিকল্পনা এবং মজাদার কিছু ফান এ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে প্রথমদিনের সমাপ্তি ঘটে।
দ্বিতীয়দিন থেকে মূল প্রোগ্রামটির সূচনা ঘটে। এইদিনের প্রথম সেশনটি পরিচালনা করেন জনাব ওমর মোস্তাফিজ, প্রোগ্রাম ম্যানেজার এফএনএফ বাংলাদেশ এবং দ্বিতীয় সেশনটি পরিচালনা করেন জনাব নাইমুল হোসেন, সহপ্রতিষ্ঠাতা, বাংলা ইন্সটিটিউট যার বিষয়বস্তু ছিল “কন্টেন্ট তৈরিঃ উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতা”। এই দুইটি সেশনের মধ্যবর্তী সময়ে কিছু গ্রুপ এ্যাক্টিভিটিও সংঘটিত হয়। পরবর্তী সেশনটি পরিচালনা করেন জনাব আলামিন প্রান্ত, সহপ্রতিষ্ঠাতা, বেস্টএইড বাংলাদেশ এবং পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন ফ্রিডম ফেলো এক্সপার্ট। তার সেশনের বিষয়বস্তু ছিল “মোবাইল জার্নালিজম”। প্রোগ্রামের তৃতীয় সেশনটি ছিল অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে যেটি পরিচালনা করেন ড. নাজমুল হোসেন, কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ, এফএনএফ বাংলাদেশ। এবং এইদিনের সর্বশেষ সেশনটি ছিল ভুয়া সংবাদ এবং সত্য নির্ণয় নিয়ে, যেটি পরিচালনা করেন জনাব আশরাফুল তানভীর, হেড অফ অপারেশনস এবং এ্যাডমিন, প্রেনিউর ল্যাব।
প্রোগ্রামটির তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনটি ছিল সহনশীলতা নিয়ে যেটির পরিচালনা করেন জনাব ওমর মোস্তাফিজ। দ্বিতীয় সেশনটির বিষয়বস্তু ছিল ডিজিটাল দুনিয়ায় অধিকার এবং গোপনীয়তা বিষয়ক যার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন জনাব আশরাফুল তানভীর। এইদিন একজন বিশেষ বক্তা উপস্থিত ছিলেন মেন্টর হিসাবে, জনাব হাসান বেনাউল ইসলাম, আইসিটি ডিভিশনের এজ প্রকল্পের সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন স্পেশালিস্ট। তিনি স্টোরিটেলিং এবং সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেশন উপস্থাপন করেন এবং পাশাপাশি কিছু গ্রুপ এ্যাক্টিভিটিও পরিচালনা করেন।
অংশগ্রহণকারীদেরকে তাদের বাছাইকৃত বিষয়ের উপর এ্যাসাইনমেন্ট হিসাবে ডিজিটাল কন্টেন্ট নির্মান এবং জমাদান বিষয়ে যাবতীয় নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং নির্ধারীত সময়ের মধ্যে সকল অংশগ্রহণকারীগণ তাদের বানানো কন্টেন্ট জমা দেন।
প্রোগ্রামের চতুর্থ দিনটি ছিল মূলত অংশগ্রহণকারীদের বানানো ডিজিটাল কন্টেন্টের উপর একটি পুরস্কার বিতরণী দিবস। এইদিনে পাঁচটি বিষয়ের উপর সেরা ডিজিটাল কন্টেন্ট নির্মাতা পাঁচজন অংশগ্রহণকারীকে বিজেতা ঘোষণা করা হয় এবং সকল অংশগ্রহণকারীদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হয়। এছাড়াও এইদিনে পলিসি সুপারিশ নিয়ে একটি গ্রুপ এ্যাক্টিভিটিও অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায় সামগ্রিক প্রোগ্রামটি নিয়ে তারা খুবই উচ্ছ্বসিত। এই প্রোগ্রামটি তাদের জন্য সময়ের সেরা একটি প্রোগ্রাম ছিল বলে তারা তাদের মতামত ব্যাক্ত করে। তারা আরো জানায় এখান থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান এবং মূল্যবোধগুলিকে তারা সারাজীবন কাজে লাগাতে চায় এবং দেশের জন্য কাজ করতে চায়। তরুণসমাজের মেধা এবং মননশীলতা বিকাশে এই ধরণের আরো আয়োজন ভবিষ্যতেও করার ব্যাপারে প্রেনিউর ল্যাব এবং এফএনএফ বাংলাদেশ খুবই আশাবাদী।