ই-কমার্স ও স্টার্ট-আপ পলিসি সহজীকরণের আহবানঃ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ট্যাক্স কমানোর দাবি : জাতীয় বাজেট ২০২১ নিয়ে আলোচনা

 গত ৫ই জুন বিজনেস বুস্ট বাংলাদেশ একটি বাজেট আলোচনার ভার্চুয়াল রাউন্ডটেবিল করেছে যেখানে দেশের পলিসি মেকারস, ইনভেস্টরস, বিজনেস লিডারস এবং তরুণ উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করেন । ইভেন্টটি প্রেনিউর ল্যাব  ইয়ুথ এন্ড ইনোভেশন “ট্রাস্ট বিজনেস বুস্ট বাংলাদেশে”-র অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয় মিডিয়া পার্টনার আরটিভি এর সৌজন্যে । 

 

এসএমই খাতে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে এবং অর্থনীতিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। তথ্য ও প্রযুক্তির কল্যাণে আজকাল তরুণরা স্টার্টআপ বা এসএমই খাতে যুক্ত হচ্ছেন, কিন্তু  ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে এখনো তাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় যার সমাধান বের করাটা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে । এই ধারণা থেকে  প্রেনিউর ল্যাব ইয়ুথ এন্ড ইনোভেশন ট্রাস্ট  বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরার জন্য “বিজনেস বুস্ট বাংলাদেশ” নামে একটি গবেষণা উদ্যোগ নিয়েছে । এই প্রোজেক্টটির মূল লক্ষ্য হল ব্যবসা নিবন্ধনের প্রক্রিয়ার সময়, খরচ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের হার কমিয়ে এনে তা সহজ করার জন্য সামনের জাতীয় বাজেটে  পলিসি এডভোকেসি প্রদান করা । এরই ধারাবাহিকতায় একটি ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে যেখানে মহিলা এবং তরুণ উদ্যোক্তারা বাজেটে কি কি সুবিধা দেখতে চান সেই পয়েন্টগুলো যোগ করতে পারেন। 

 

এই ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে এবং এই বিষয়ুলো নিয়ে আলোচনা করার প্রেক্ষিতে গত শনিবার একটি ভার্চুয়াল  বাজেট আলোচনা ইভেন্ট আয়োজন করা হয়।  ইভেন্টটিতে প্রধান অতিথি  হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডঃ আতিউর রহমান, সাবেক গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেন, “ কোভিড আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হওয়া সত্ত্বেও,  উদ্যোক্তারা জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। এই করোনাকালে হাজার হাজার নতুন স্টার্টআপ শুরু হয়েছে যাদের একটি বড় অংশ হল নারী উদ্যোক্তারা।” তিনি আরও বলেন, “ BIDA এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রায় ৩১% শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের আর্থিক লেনদেন মোবাইল ফাইনানশিয়াল সার্ভিসগুলোর (এম এফ এস) মাধ্যমে করে থাকেন। কিন্তু এই এম এক এস এর জন্য ট্যাক্স বাড়িয়ে  ২.৫% থেকে ৭% করা হয়েছে।” স্টার্টআপ ঢাকার কো- ফাউন্ডার ফায়েজ তাহের বলেন, “টেক কোম্পানিগুলোর জন্য একটি “ওয়ান স্টপ সল্যুশন” দরকার যাতে করে তারা এক জায়গা থেকেই ভ্যাট রেজিস্ট্রেশান করতে পারে। একটি সেন্ট্রাল রেজিস্ট্রেশান গঠন করা অত্যন্ত জরুরী। ” ই-ক্যাব এর জয়েন্ট সেক্রেটারি নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, “ট্রেড লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় ই-কমার্স এর জন্য কোন অপশন নেই। এটার দাবি আমরা বেশ কয়েক বছর থেকে জানিয়ে আসছি” ওল্ড বেলি চেম্বারস এর ম্যানেজিং পার্টনার এ বি এম হামিদুল মিসবাহও উপস্থিত ছিলেন। তিনি অনেক ল এবং লিগ্যাল প্রসেস নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “ আইনে স্টার্টআপের কোন সংজ্ঞা নেই। স্টার্টআপ মূলত টেকনোলজিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে থাকে। স্টার্টআপকে আইনি আওতাভুক্ত করার এখনি উপযুক্ত সময় যাতে করে স্টার্টআপের ইনোভেশন, স্কেলিং এবং গ্রোথ বৃদ্ধি পায়”। আইসিটি ডিভিশন থেকে আইডিয়া প্রোজেক্টের আর এইচ এম আলোয়াল কবির বলেন, “ আইসিটি ডিভিশনের আইডিয়া প্রোজেক্ট থেকে স্টার্টআপদের সাপোর্ট প্রদান করা হয়। আমরা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রান্ট দিয়ে থাকি এবং এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭৯টি স্টার্টআপকে আমরা ফান্ড প্রদান করেছি। 

 

ইভেন্টটিতে আশরাফুল আলম, ডিরেক্টর, বাংলাদেশ ব্যাংক, আদনান এমডি দেওয়ান, আইডিয়া প্রোজেক্ট, আইসিটি ডিভিশন, ফায়েজ তাহের, কো- ফাউন্ডার স্টার্টআপ ঢাকা, ডঃ শেখ মইনুল হোসেন খোকন, হিউম্যান এইড ফাউন্ডেশন , সৈয়দ নাইমুল হোসেন, কো- ফাউন্ডার, টিচ ইট, শাহ্‌ পরান, সিইও, হ্যান্ডি মামা, সামান্থা ফারাহনাজ, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ব্র্যাক, ওমর মোস্তাফিজ, এফএনএফ, বাংলাদেশ- সহ আরও অনেক তরুণ উদ্যোক্তা এবং পলিসি এডভাইসররা এবং তারা বিভিন্ন পয়েন্ট নিয়ে কথা বলেন। স্পিকাররা ব্যবসা নিবন্ধন এবং ট্রেড লাইসেন্স প্রক্রিয়া, ব্যবসা নিবন্ধন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন, ই- ট্রেড লাইসেন্স এবং ফান্ডিং এর সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন।  

স্পিকাররা মনে করেন যে, জাতীয় বাজেটে উদ্যোক্তাদের কথা মাথায় রেখে শিল্পোদ্যোগ, স্টার্টআপ এবং বিজনেস লিগ্যালাইজেশনের দিকে বেশি লক্ষ্য করা উচিত যাতে করে তারা সহজভাবে নিজেদের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। 

প্রেনিউর ল্যাবের সিইও আরিফ নিজামী মনে করেন যে, এই আলোচনা সভা আসন্ন পলিসিতে পরিবর্তন আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।