তরুণ গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য “মোবাইল জার্নালিজম কর্মশালা” অনুষ্ঠিত

গণমাধ্যম একটি সমাজের দর্পণস্বরূপ। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে। বলা হয়ে থাকে “গণতন্ত্রের মেরুদন্ডই হচ্ছে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং দায়িত্বশীল গণমাধ্যম”। কাজেই সমাজের নিকট গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতা বর্ণনাতীত। সমাজের অগ্রগতিতে গণমাধ্যমের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ প্রকৃত সত্যের উন্মোচন, সঠিক সংবাদ পরিবেশন এবং অসামঞ্জস্যতার সমালোচনা। সাধারণ মানুষের জীবনে গণমাধ্যমের প্রভাব এতই বেশি যে এটি তাদের সামাজিক ধ্যান ধারণা, বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গি, সংস্কৃতি এমনকি ঐতিহ্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলতে সক্ষম। সময়ের শুরু থেকেই সমাজ এবং মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির বিবর্তনে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সমাজের বিবর্তন থেকে শুরু করে সময়ের বিবর্তনের মধ্যে গণমাধ্যম নিজেও অনেক বিবর্তনের ধারা অতিক্রম করেছে। একটা সময় কবুতর ছিল সংবাদ মাধ্যমের অংশ। পরবর্তীতে অনেক বিবর্তনের পর, বৈদ্যুতিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে, একটা বড় সময় ছাপানো সংবাদ মাধ্যম দখল করেছিল গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য স্থান।  বৈদ্যুতিক গণমাধ্যমের প্রচলনের পর থেকে গণমাধ্যম এখন আরো বেশি মানুষের হাতের মুঠোয় এসে গিয়েছে এবং যে কোন প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌছানো আরো সহজ হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে নতুন নতুন ধরণের গণমাধ্যমেরও বিকাশ ঘটছে এবং মোবাইল জার্নালিজম তার ভিতর একটি। 

এইরকম সময়ে প্রেনিউর ল্যাব ইউথ এন্ড ইনোভেশন এবং ফ্রেডরিখ নাওমান ফাউন্ডেশন যুগ্মভাবে “ফিউচার অফ মিডিয়া সামিট” নামে একটি মিডিয়া সামিট আয়োজন করে, “মোবাইল জার্নালিজম” নামে একটি কর্মশালা ছিল এটির অংশ। এই কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়েছিল মূলত বিভিন্ন মোবাইল জার্নালিস্ট, মোবাইল কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিস্ট এবং তরুণ গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য। এটি ছিল একটি চারদিন ব্যাপী কর্মশালা। কর্মশালাটিতে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন কিছু স্বনামধন্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং এটির মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল অংশগ্রহণকারীদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করে তোলা যেমন মিথ্যা সংবাদ নির্ণয়, গণমাধ্যম শিষ্টাচার, গণমাধ্যমের উন্নতির জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতা। এই কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন ওমর মোস্তাফিজ, প্রোগ্রাম ম্যানেজার অফ এফএনএফ বাংলাদেশ; আরিফ নিজামী, সহ-প্রতিষ্ঠাতা, প্রেনিউর ল্যাব; রাখশান্দা রুখাম, সহ-প্রতিষ্ঠাতা, প্রেনিউর ল্যাব। 

কর্মশালাটি শুরু হয় ২ জুলাই, ২০২১ এবং শেষ হয় ১০ জুলাই ২০২১। সর্বমোট ৮০ জন কর্মশালাটিতে অংশগ্রহণ করার জন্য নিবন্ধন করেন এবং তাদের ভিতর থেকে ৫০ জনকে নিয়ে কর্মশালাটি শুরু হয়। স্বনামধন্য কিছু গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের মাধ্যমে তাদেরকে প্রশিক্ষণের একটি পরিপূর্ণ চক্র সম্পূর্ণ করা হয়। এই কর্মশালায় প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন জনাব হারুনুর রশিদ, বাংলাদেশ করেসপন্ডেন্ট ডিডব্লিউ; জনাব বাদশা নিয়া, সহকারী সম্পাদক, বাংলা টিভি; মোঃ ইউনুস আলী, সিনিয়র জয়েন্ট নিউজ এডিটর, যমুনা টিভি; জনাব মাকসুদুন নবী, সিনিয়র রিপোর্টার, চ্যানেল ২৪ এবং জনাব সাব্বির আহমেদ, লিড অফ মোবাইল জার্নালিজম অফ বাংলাদেশ।  

এই কর্মশালাটির চূড়ান্ত এবং পুরস্কার বিতরনী ছিল ২৫ আগস্ট, ২০২১ বুধবার। চূড়ান্ত পর্যায়ে মনোনীতরা তাদেরকে প্রদত্ত ২১ টি এসাইনমেন্ট সম্পূর্ণ করে জমা দিয়েছিলেন এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারকগণ চূড়ান্ত পর্যায়ের বিজেতাদের মনোনীত করেন।

যেহেতু গণমাধ্যম একটি সমাজের সার্বিক অবস্থাকে প্রতিফলিত করে, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় গণমাধ্যমের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিটি ব্যক্তির সত্য-মিথ্যা, সঠিক-ভুল ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকা অত্যাবশ্যক। এই ধরণের কর্মশালা গণমাধ্যম কর্মীদের আরো বেশি সচেতন এবং সচল করে তুলতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।